লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় মেঘনার পাড় ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন স্পট আলতাফ মাষ্টার ঘাট মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে বিলিনের পথে। নদীর ঢেউয়ের প্রচণ্ডতায় দীর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। গত ১০ বছরের ব্যবধানে চরবংশী মৌজার কয়েক হাজার একর জমি সাগরের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে ঘরবাড়ি, পর্যটন কেন্দ্র, শত শত দোকান, স্কুল-মসজিদ-মন্দির। জানা যায়, রায়পুর উপজেলার চর বংশী ইউনিয়নের মেঘনার নদী পাড়ে আলতাফ মাস্টার মাছ ঘাটকে কেন্দ্র করে মানুষের বিচরণ বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে তা জনপ্রিয় হতে থাকে। মানুষের সাথে সাথে মাছ ঘাটটি ঘিরে গড়ে ওঠে শতাধিক দোকান, হোটেল ও রেন্টুরেন্ট। দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে ঘাট ঘিরে আনা হয় নানান সৌন্দর্য। গত কয়েক বছরে ঘাটটি হয়ে ওঠে জেলাবাসীর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

চলতি বর্ষা মৌসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারে এ ভাঙন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নদীর উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে ঘাট ভেঙে যাওয়াসহ শত শত দোকানপাট ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ভেঙ্গে গেছে দৃষ্টিনন্দন ভাবে গড়ে তোলা এসকে কলাপাতা রেস্টুরেন্ট, জলপরী চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও রিভারভিউ রেস্টুরেন্ট। ভাঙনের কবলে নদীর তীরের বহু ক্ষুদে দোকানি ইতিমধ্যে তাদের দোকানপাট কয়েক দফা স্থানান্তর করেছেন। সড়কের পাশের জায়গা ছাড়া এখন আর সরানোর কোনো জায়গা নেই। ফলে ক্ষুদে দোকানিরা এখন চরম বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রায়পুরের একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র আলতাফ মাস্টারের ঘাট। এতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চরবংশী ইউনিয়নের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানানো হলেও কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরিকল্পনাবিহীন ড্রেজিং এবং নদীর প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ও চরআবাবিল ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে যাবে। স্থানীয় মাস্টার ঘাটের বাসিন্দারা বলেন, অবিলম্বে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে উপজেলার একমাত্র পর্যটন কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে, যা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রায়পুর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী গোকুল চন্দ্র পাল বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বাজেট পাঠিয়েছি, কিন্তু বাজেট পাশ হয় নি। এখন আমাদের ফান্ড নেই। তারপরও আমরা জরুরিভাবে আলতাফ মাস্টার ঘাট কেন্দ্রিক কিছু কাজ করবো। আশা করি দ্রুত আমরা কাজ শুরু করবো। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান খান বলেন, শুধু পর্যটন কেন্দ্র আলতাফ মাস্টারের ঘাট নয়, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মেঘনার নদী ভাঙন স্থানগুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন মহলকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।