লক্ষ্মীপুর পৌরসভার পুরাতন সড়ক অবরুদ্ধ করে কাঁচাবাজারের দোকান বসিয়ে চলছে বেচাকেনা। সপ্তাহের দুই দিনে যেন এই সড়কের পথচারীদের জন্য একটা অভিশাপ। ভ্যান-রিকশা-বাইসাইকেল মোটরসাইকেলের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের চলাচল। হয়রানী আর ভোগান্তির শিকার এই সড়ক ব্যবহারকারীরা।
জানাগেছে, পৌর শহরের চিরচেনা পুরাতন পৌরসভা সড়ক। মূল শহরের এক গলির সড়কের কারণে সংযোগ সড়ক হিসেবে এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করে অসংখ্য পথচারী সহ বিভিন্ন বাহন। সময় বাঁচাতে এবং দুর্ভোগ লাগবে বাগবাড়ি কিংবা মাদাম থেকে বাজারের দিকে আসার জন্য সরাসরি সড়কটি ব্যবহার করে জনসাধারণ। সোনালী কলোনীর মুখে আসলেই বাঁধে বিপত্তি। চকবাজার হয়ে পুরাতন পৌরসভা সড়কের প্রবেশ মুখ থেকে সোনালী কলোনী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে কাঁচা মালামালের ফসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা। সড়কে বন্ধ করে চলে বেচাকেনা। ফলে যানবাহন ও পথচারীদের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটে। সপ্তাহের দুইদিন যেন অভিশাপ নেমে আসে এই সড়ক ব্যবহারকারীদের উপর। ভোগান্তির শিকার হয় বিভিন্ন পেশার মানুষ।
প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বৃহস্পতিবার এই সড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কোন ধরণের নিয়ম-শৃঙ্খলা কোন বালাই নাই। যে যার ইচ্ছেমতে টুকরি কিংবা ছোট ছোট চকি বিছিয়ে বসে যান কাঁচামাল নিয়ে। কেউ আবার সড়ক দখল করে ভ্যানগাড়ীতে নিরবচ্ছিন্ন বেচাকেনা করে। এমন পরিস্থিতিতে নাভিশ্বাস হয়ে পড়ে শহরবাসীর। এভাবে সাপ্তাহিক হাটের দিনে সড়কের উপর কাঁচাবাজার বসানো কতুটুক যৌক্তিক তা প্রশাসনের বিবেচনায় আনার দাবি সচেতন মহলের। কাঁচা মালামাল বিক্রি করা বা কাঁচা মালের বাজার বসার কারণে যানজট ও জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায়শই লক্ষ্মীপুর শহরের পুরাতন পৌরসভা সড়কে দেখা যায়। একইভাবে পুরাতন আদালত সড়ক সহ তিন দিকের তিনটি সড়ক ব্লক করে চলে এসব বেচাকেনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে কখনো কখনো সড়কের উপর বসে কাঁচা মালামাল সহ বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করছে বিক্রেতারা। সড়কের উপর দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচাপণ্য কিনছেন ক্রেতা সাধারণ। মাঝেমধ্যে নারী ক্রেতারা সড়কে দাঁড়িয়ে দর কষাকষি কিংবা কেনাকাটার সময় পুরুষের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তর্কবির্তকের একপর্যায়ে হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটে। এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া দুই দিক থেকে ভ্যান ও রিকশাযোগে কিংবা মোটরসাইকেল যাতায়াতের সময় মাঝপথে বাঁধে যানজট। ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগেই থাকে যাজনট। একসঙ্গে ওই সড়কের দুই পাশে মোটরসাইকেল অবস্থান করার কারণে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এসব সমস্যা সমাধানে কোন ধরণের পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি হাটে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে নির্ধারিত স্থানে বসে বেচাকেনা করছেন তারা। তাদেরকে বেচাকেনার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হলে এমন সমস্যার সম্মুখিন হতোনা।
জানাগেছে, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কাঁচা বাজার ইজারার দরপত্রে সমগ্র পৌরসভার কাঁচাবাজার লেখা থাকলেও নির্দিষ্ট স্থান কাঁচাবাজার উল্লেখ্য নাই। ফলে যত্রতত্রে পুরো বাজার জুড়ে ভ্যান কিংবা টুকরি করে কাঁচাপণ্য বিক্রি করা হয়। পুরাতন পৌরসভা সড়কটিতে বাজার বসলেও পৌরসভার নির্দিষ্ট কাঁচাবাজার এটি নয়। দীর্ঘসময় হতে এই সড়কটি দখল করে কাঁচাপণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। গত এক বছর পূর্বে গোডাউন রোডে কাঁচাবাজার জন্য একটি টিনশেড করে দিয়েছে পৌরসভা। সাময়িক সময়ের জন্য পুরাতন আদালত থেকে বাজার সরে গেলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে পুনরায় পুরাতন পৌরসভা সড়ক কাঁচাবাজার হিসেবে দখল হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, পুরাতন পৌরসভা সংলগ্ন বিশাল দিঘি। দিঘির চারপাশে বসে বেচাকেনা করা যায়। বেশ জায়গাও রয়েছে সেখানে। চারপাশ জুড়ে স্থায়ীভাবে বসে বিক্রেতারা তাদের কাঁচামাল নিয়ে বেচাকেনা করতে পারে।
সড়কের উপর বসে বেচাকেনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে লক্ষ্মীপুর বনিক সমিতির সেক্রেটারী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, চকবাজার হয়ে পুরাতন পৌরসভার প্রবেশ মুখ থেকে পুরাতন ঘর পর্যন্ত কোন দোকানী যেন না বসে সে ব্যাপারে বলা আছে। যাতায়াতের যেন বিঘ্ন না ঘটে সেদিক ঠিক রেখে দোকানীরা বেচাকেনা করবে। যদি এর ব্যতিক্রম হয় তাহলে নিয়মানুযায়ী তাদের ব্যাপারে কঠোর হস্তক্ষেপ করা হবে।
লক্ষ্মীপুর পৌর প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেছেন, দীর্ঘ সময় পুরাতন পৌরসভা সড়কে বসেই কঁচাবাজার চলে এসেছে। এখনো চলছে। তবে যানজট সৃষ্টি করে বেচাকেনা করা অপরাধ অন্যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এই ধরনের কার্যক্রম আইনত নিষিদ্ধ না হলেও, যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। পৌর প্রশাসন ও বনিক সমিতির হস্তক্ষেপে সড়কটি চেয়ে দিঘির পাড়ে বাজার বসে জনসাধারণকে দুর্ভোগমুক্ত করে যাতায়াতের পথসুগম করবে। সংশ্লিষ্টদের নিকট এমনটাই প্রত্যাশা পৌর শহরবাসীর।